সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস
সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস পুরুষদের এবং মহিলাদের সমানভাবে আক্রান্ত করে। বেশিরভাগ লোক যারা সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হয় তাদের প্রথমে ত্বকে চর্ম সোরিয়াসিস ও পরে বাতের লক্ষণগুলো দেখা যায়। তবে প্রায় ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে চর্মের লক্ষণগুলো প্রদর্শিত হওয়ার আগে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসের ব্যথা দেখা দিতে পারে।
সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস কেন হয়?
সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসের সঠিক কারণ গবেষকরা এখনো সনাক্ত করতে পারেননি। তবে তারা বিশ্বাস করেন যে এই রোগটি জেনেটিক, ইমিউনোলজিক্যাল এবং পরিবেশগত কারণগুলোর সংমিশ্রণে বিকশিত হয়।
১) জিনগত কারণ: চর্মের সোরিয়াসিস বা সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত মানুষের প্রায় ৪০ শতাংশের মধ্যে এই ব্যাধির পারিবারিক ইতিহাস থাকে। এর অর্থ এই যে, কোনো চর্মের সোরিয়াসিস বা সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসে আক্রান্তরোগীর আত্মীয়ের এই রোগ বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা অন্য যেকোন সাধারণ ব্যক্তির তুলনায় প্রায় ৫০ গুণ বেশি। জিনতাত্ত্বিক গবেষকরা কিছু নির্দিষ্ট ক্রোমোজোমের এলাকা (এইচএলএ) চিহ্নিত করেছেন যা সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া অন্যান্য জেনেটিক কারণ এই রোগের তীব্রতা বাড়াতে অবদান রাখতে পারে।
২) ইমিউনোলজিক্যাল কারণ: সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস রোগীর মধ্যে ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিকতাগুলো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদ্যমান।
৩) পরিবেশগত কারণ: নির্দিষ্ট জীবাণুর সংক্রমণ সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারে। যদিও সেটা শক্তভাবে প্রমাণিত হয়নি।
৪) সোরিয়াসিস চামড়ার যে সকল স্থান ঘনঘন আঘাতপ্রাপ্ত হয় সেখানেও হতে পারে। এটিকে 'কবনার ফেনোমেনা' বলা হয়। কিছু রোগী আহত জয়েন্টের মধ্যে আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হয়। প্রকৃতপক্ষে, শারীরিক ট্রমাকে একটি ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ
১) জয়েন্ট বা গিরার ব্যথা।
২) সকালে ঘুম থেকে উঠে কোমরে ব্যথা, হাঁটা চলায় সেটা কমে যাওয়া এবং বিশ্রামে আবার সেটা বেড়ে যাওয়া।
৩) জয়েন্টগুলো সকালে জমে থাকা (অর্ধেকের বেশি রোগীর সেটা ৩০ মিনিটের অধিক স্থায়ী হয়)।
৪) স্কিন প্যাচ (প্ল্যাক) যা শুকনো বা লাল হয়, সাধারণত চিলি-সাদা আঁশ দিয়ে আচ্ছাদিত হয়, যার প্রান্তগুলো উঁচু হতে পারে।
৫) নখের অস্বাভাবিকতা, যেমন নখের মধ্যে ফোটা বা পিটিং, বিবর্ণতা, নখের গোড়া থেকে উঠে যাওয়া, ভঙ্গুরতা (আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগের এই সমস্যা থাকে)।
৬) একটি নিদিষ্ট আঙ্গুল সম্পূর্ণভাবে ব্যথাযুক্ত ও ফুলে যাওয়া (ডেক্টালাইটিস) যেটিকে সসেজ আঙুল বলা হয়ে থাকে।
সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসের ধরণ
১) আঙ্গুলের শেষ জয়েন্ট আর্থ্রাইটিস (Distal arthritis).
২) অলিগো-আর্থ্রাইটিস- ২ থেকে ৪ টি জয়েন্ট আর্থ্রাইটিস এবং সেটি উভয়পাশের একই গিরা আক্রান্ত করে না (Asymmetrical oligoarthritis).
৩) পলি-আর্থ্রাইটিস- ৫ বা অধিক জয়েন্ট আর্থ্রাইটিস এবং সেটি উভয়পাশের একই গিরা আক্রান্ত করে, এটি রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মত লক্ষণ তৈরি করে এবং এ ধরণটি সাধারণত বেশি দেখা যায় (Symmetrical polyarthritis).
৪) আর্থ্রাইটিস মিউটিলেন্স- এ ধরণের আর্থ্রাইটিস গোড়ালি জয়েন্টগুলোকে বিকৃত এবং ধ্বংস করে এবং এটি প্রায়ই হাতের বা পায়ের আঙ্গুলকে সংকুচিত করে (Arthritis mutilans).
৫) স্পন্ডাইলোআর্থ্রাইটিস- এ ধরণে মেরুদন্ডের জয়েন্টগুলো আক্রান্ত হয় (Spondyloarthritis).
অন্যান্য সমস্যা- আর্থ্রাইটিসে যেখানে লিগামেন্ট বা মাংসের টেন্ডন হাড়ের সাথে সংযুক্ত হয়ে থাকে সেখানেও প্রদাহ হতে পারে যেটিকে এন্থেসাইটিস (Enthesitis) বলা হয়। সাধারণত গোড়ালির পেছনে অ্যাকিলিসের টেন্ডনের সংযুক্তিস্থলে (Achilles tendinitis), পায়ের তলার প্লান্টার ফাশার সংযুক্তির স্থানে প্রদাহ হয়ে থাকে (Plantar fascitis). এর ফলে সকালে বা বিশ্রামের পর এই স্থানগুলোতে ব্যথা অনুভূত হয়। আর্থ্রাইটিস রোগীরা চোখের দৃষ্টি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, এক বা দুই চোখ লাল হয়ে দেখতে অসুবিধা হতে পারে এটা সাধারণত ইউভাইটিস (Uveitis)-এর কারণে হয়ে থাকে। সোরিয়াসিসের রোগীদের মতো সোরিয়াসিস আর্থ্রাইটিস রোগীদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে; নির্দিষ্ট ওষুধ এবং লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে এই ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব।
সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস রোগ সনাক্তকরণ
চিকিৎসক রোগের লক্ষণ, রোগীর ইতিহাস, পারিবারিক ইতিহাস, রোগীর প্রদাহের বিস্তারিত এবং শারীরিক পরীক্ষা এবং জয়েন্টের এক্স-রে, রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ সনাক্ত করেন। এক্ষেত্রে প্রধানত রিউম্যাটোলজিস্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া জরুরী।
Post a Comment