সোরিয়াসিস নিয়ে জীবনযাপন
সোরিয়াসিসের এই আস্তরণগুলোকে খুঁটলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পিনের মতো রক্তক্ষরণ হতে পারে। সাধারণত সোরিয়াসিসে আক্রান্ত স্থান তেমন চুলকায় না। কখনো কখনো মাথার ত্বকও আক্রান্ত হয়, মরা ত্বক সাদা সাদা গুঁড়ার মতো ঝরতে থাকে, আর দিনের পর দিন কেবল খুশকি ভেবে চিকিৎসা করা হয়।
সোরিয়াসিস কেবল ত্বকের রোগ নয়, এটি মাঝেমধ্যে ফ্লেয়ার বা জ্বালা করতে পারে, যখন সারা শরীর পুঁজ ভরা দানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়, আর প্রদাহজনিত কারণে জ্বর আসে। এক্সফোলিয়েটিভ ডারমাটাইটিস নামে ভয়ানক প্রদাহ হতে পারে, তখন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার দরকার হয়। আবার কারও কারও এ থেকে সন্ধি আক্রান্ত হতে পারে, যাকে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস বলা হয়। এ ধরনের আর্থ্রাইটিসে হাতের সন্ধিগুলো বাঁকা ও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই সোরিয়াসিসের শুরু থেকেই সঠিক চিকিৎসা জরুরি।
সোরিয়াসিস থাকলে জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি
সোরিয়াসিস কখনো পুরোপুরি সেরে যাবে না, তবে সোরিয়াসিস আর দশটা ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি রোগের মতো নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সোরিয়াসিস রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকা স্বাভাবিক, তাই পরিবারে সোরিয়াসিস থাকলে ত্বকের সমস্যায় সচেতন হওয়া উচিত।
ধূমপান একেবারেই বর্জন করতে হবে। এ ধরনের রোগীর জন্য ধূমপান খুবই সমস্যা সৃষ্টি করে। স্থূলতা থাকলে ওজন কমিয়ে সঠিক ও আদর্শ ওজন বজায় রাখুন। মানসিক চাপ রোগটিকে বাড়াতে সাহায্য করে, তাই চাপমুক্ত থাকুন। রেড মিট বা লাল মাংসে অ্যারাকিডনিক অ্যাসিড বেশি থাকে, তাই এড়িয়ে চলা ভালো। টমেটোও তাই। কাটাছেঁড়া বা সার্জারির পর ফ্লেয়ার হতে পারে, তাই এমন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কিছু ওষুধ সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে, যেমন রক্তচাপের ওষুধ বিটা ব্লকার বা ম্যালেরিয়ার ওষুধ; তাই যেকোনো চিকিৎসার জন্য কারও কাছে গেলে নিজের রোগটি সম্পর্কে অবহিত করবেন।
সোরিয়াসিসের রোগীর জন্য উপকারী খাবার হলো বাদাম, সামুদ্রিক মাছ ও মাছের তেল (ওমেগা–৩), সবুজ পাতাওয়ালা সবজি, শাক ইত্যাদি। সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি আছে যা উপকারী, তাই কিছুক্ষণ রোদে কাটানো ভালো।
ত্বক শুষ্ক রাখা যাবে না। শীতকালে সমস্যা বাড়ে। গর্ভাবস্থায় সোরিয়াসিসের ওষুধ বন্ধ করে দিতে হয়, তাই ফ্লেয়ার হতে পারে বা বেড়ে যেতে পারে। তাই সোরিয়াসিস রোগটি নিয়ন্ত্রণে এনে সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করুন, সন্তান ধারণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।
মুখে খাবার বা শিরায় দেওয়ার যেকোনো রকমের স্টেরয়েড সোরিয়াসিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। তাই কোনো কারণে স্টেরয়েড সেবন করতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সোরিয়াসিস চিকিৎসা নানা রকমের
চিকিৎসা নির্ভর করে রোগটি মৃদু, মাঝারি নাকি তীব্র পর্যায়ে আছে, কিংবা শরীরের কোন কোন অংশ বা কত ভাগ আক্রান্ত তার ওপর। মৃদু মাত্রার হলে সাধারণত নানা ধরনের মলমই যথেষ্ট। ত্বকে লাগানোর জন্য স্টেরয়েড মলম, ক্যালসিপট্রিওল বা নতুন ধরনের ইমিউনোমডুলেটর মলম ব্যবহার করা হয়। ময়েশ্চার রাখার জন্য কিছু ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট।
এতে কাজ না হলে বা সোরিয়াসিস রোগের বিস্তার বাড়তে থাকলে মুখে খাবার ওষুধ ব্যবহার করা হয়। যেমন মিথোট্রেক্সেট, সাইক্লোস্পোরিন, এসিট্রেসিন ইত্যাদি। তাতেও কাজ না হলে নানা রকম বায়োলজিক ওষুধ, যেমন এডালিমুমাব, ইনফ্লিক্সিমাব, ইটানারসেপ্ট ইত্যাদি। মনে রাখবেন, এসব ওষুধের নানা রকমের জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা যাবে না। আর ওষুধ খেলে বারবার অনেক কিছু পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
ওষুধের বাইরে ক্ষেত্রবিশেষে ফটোথেরাপি, আলট্রাভায়োলেট রশ্মি দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়, নখ আক্রান্ত হলে নখের পাশে ইনজেকশন দেওয়া হয়। সন্ধি আক্রান্ত হলে বাতরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ লাগতে পারে।
সোরিয়াসিস সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি
বিশ্বের ২ থেকে ৩ শতাংশ মানুষ সোরিয়াসিসে আক্রান্ত। এই রোগ সেরে যায় না কিন্তু চিকিৎসা নিলে সারা জীবন সুস্থ থাকা যায়। সোরিয়াসিস হলে সুস্থ সুশৃঙ্খল জীবনযাপন জরুরি। মনে রাখবেন, সোরিয়াসিস রোগটি ও এর চিকিৎসা আপনার ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে আক্রান্ত করতে পারে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিয়ন্ত্রণ করুন, পুষ্টিকর খাবার খান, আদর্শ ওজন বজায় রাখুন। কোভিডকালীন মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
ধন্যবাদ
সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন।
ফার্মাসিস্ট মোঃ গোলজার হোসেন।
Post a Comment